নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সর্বস্তরে যৌন হয়রানি বন্ধে পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত আইনের প্রয়োজন। যৌন হয়রানি, নারী নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে রাষ্ট্রকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করার তাগিদ দিয়েছেন বরিশালের নারী অধিকার কর্মীরা। শুধু আইন প্রণয়নই নয়, বরং যৌন হয়রানি বন্ধে পরিবার থেকেই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাও একান্ত জরুরী। নারীদের প্রতি যৌন হয়রানির প্রতিরোধ করতে হলে নারী-পুরুষ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রয়াসে যৌন হয়রানি নির্মূল হবে। নগরীতে অনুষ্ঠিত এক সভায় এমনই মত দিয়েছেন বক্তারা। গতকাল মঙ্গলবার আমির কুটির রোডের আভাস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অনুষ্ঠিত গার্লস অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্স প্রকল্পের অরিয়েন্টশন সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহযোগিতায় জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম এ সভার আয়োজন করে। জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি খালেদা হকের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রাশিদা বেগম। গার্লস অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্স ও যৌন হয়রানি আইন বিষয়ে তথ্যপত্র উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের জেলা সম্পাদক মেহের আফরোজ মিতা। মুখ্য আলোচক ছিলেন জাতিসংঘ শিশু তহবিল’র (ইউনিসেফ) শিশু সুরক্ষা কর্মকর্তা মুমিনুন্নেছা শিখা। যুব সংগঠক সোহানুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’র জেলা সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আক্কাস হোসেন, বিসিসি কাউন্সিলর কহিনুর বেগম, বরিশাল নগর শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরীন নাহার, উন্নয়ন সংগঠক রণজিত দত্ত, আভাসের নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল, ব্র্যাকের সেক্টর স্পেশালিস্ট সুবর্ণা খাতুন, নারী সংগঠক খালেদা ওহাব, সাংবাদিক মর্জিনা বেগম, শিক্ষক শিবানী সাহা প্রমুখ। এছাড়াও সভায় গার্লস নট ব্রাইডস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ, বিকশিত নারী নেটওর্য়াক, ইয়ূথ এন্ডিং হাঙ্গার, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট, বাংলাদেশ মডেল ইয়ূথ পার্লামেন্টসহ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ও সক্রিয় এমন বিভিন্ন সংগঠন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম কর্মী, যুব সংগঠন ও শিক্ষক প্রতিনিধিগণ আলোচনায় অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মেয়েদের বা নারীদের উত্যক্ত করা, তাকিয়ে থাকা, ই-মেইল বা ফোনে বিরক্ত করা, এমনকী রাস্তায় অচেনা কাউকে ‘সুন্দরী’ বলা বা অশ্লীল কোন মন্তব্য করা, বিদ্বেষমূলক অঙ্গভঙ্গি করা, টিটকিরি, ব্যঙ্গবিদ্রুপ করা, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ইশারা দেওয়া এসবই যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে। যৌন-হয়রানি রোধে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা রয়েছে। যৌন-হয়রানি প্রতিরোধ খসড়া আইন ২০১০’ প্রণীত হলেও এখন পর্যন্ত তা সংসদে পাস হয়নি। এই আইনের খসড়ায় কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে হয়রানির কথা বলা হলেও বাস্তবে কিন্তু জনসমাগম স্থলে নারী যৌন হয়রানির শিকার হয় সবচেয়ে বেশি। আর নিজ গৃহে যৌন হয়রানির ঘটনাতো অহরহ ঘটছেই। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করলেও তা নিষ্কিয় রছেছে। এছাড়া অভিযোগকারী ভিকটিম ও স্বাক্ষীর পর্যাপ্ত সুরক্ষাও নেই। এমন পরিস্থিতিতে সকল ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে স্বমন্বিত ও পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা তারা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। মতবিনিময় সভায় বক্তারা সমাজের সকল ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড ও মহল্লায় বেশি বেশি করে উঠান বৈঠক, যৌন হয়রানি বন্ধে সচেতনতামূলক নাটক প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ, ব্যানার ও বিলবোর্ড প্রদর্শনের কথা বলেন।
Leave a Reply